ট্যাগিং : বিভাজন ও দলবাজির স্বরূপ | ব্লগ

ট্যাগিং : বিভাজন ও দলবাজির স্বরূপ



‘ডিভাইড এন্ড রুল’ আমাদের দেশে এই নীতিটা সম্ভবত সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয় ট্যাগিং সংস্কৃতিতে। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমজনতার সহমর্মিতা ও সমর্থনকে কমিয়ে দিতে সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানটির ওপর কৌশলে একটা ট্যাগ বসিয়ে দিতে পারলেই ‘কেল্লা ফতে’। উদাহরণস্বরূপ: বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের কথাই ভাবুন। একজন মানুষকে অ,ন্যায়ভাবে খু,ন করা হয়েছে। পুরো দেশের মানুষ প্র,তিবাদী হওয়ার কথা। অথচ একটা রাজনৈতিক ট্যাগ দিয়ে দেশের অর্ধেক মানুষকে প্র,তিবাদ থেকে বিমুখ করে দেওয়া হয়েছে।

লতা সমাদ্দার আর পুলিশ কনস্টেবল নাজমুল তারেকের ঘটনাটা ভালোভাবে খেয়াল করুন। ‘দাড়িওয়ালা’ এই একটি ট্যাগেই তার প্রতি সকল জু,লুমের ন্যায্যতা তৈরি করে দেওয়া হলো।

এইভাবেই প্রতিটি ঘটনায়, প্রতিটি ঐক্যের সম্ভাবনায়, প্রতিটি জু,লুমের পরে মজলুমের পক্ষে জনতাকে ও বিচারের দাবিকে নানা রকমের ট্যাগের বদৌলতে বিভাজিত করে দেওয়া হয়। ফলে ‘সেক্যুলার’ নির্যাতিত ও মজলুম হলে ধার্মিক নীরব থাকে। ‘ধার্মিক’ নির্যাতিত ও মজলুম হলে সেক্যুলার নীরব থাকে। ‘জামাত-বিএনপি’ নি,র্যাতিত হলে আওয়ামী লীগ নীরব থাকে। ‘আওয়ামী লীগ’ নির্যাতিত হলে জামাত-বিএনপি নীরব থাকে। ‘মোল্লা’ নির্যাতিত হলে মাস্টার নীরব। ‘মাস্টার’ নির্যাতিত হলে মোল্লা নীরব। ‘ব্রাহ্মণের’ বিপদে হুজুর নাই; আবার ‘হুজুরের’ বিপদেও ব্রাহ্মণ নাই। এইগুলো খুব সাধারণ হিসেব। স্থূল দর্শন।

একটু সূক্ষ্ম ও গভীর পর্যবেক্ষণে এই ট্যাগিং পলিটিক্সটা শিল্প, সাহিত্য, রাজনীতি, শিক্ষা, সমাজ, পঞ্চায়েত, মসজিদ, মাদরাসা, বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে ভার্চুয়াল জগতে একটা আজদাহার রূপ নিয়েছে। যেকোনো অন্যায়, জুলুম, রাজনৈতিক গুম-খু,ন, অধিকারহীনতা, বিচারহীনতাকে ন্যায্যতা দিতে এই ট্যাগিং সংস্কৃতি ব্যবহার হচ্ছে খুব কৌশলে।

প্রাপ্য অধিকার বঞ্চিত করতে, প্রমোশন ঠেকাতে, চাকুরিতে যোগদান ঠেকাতে, কবি-লেখকদের রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে, প্রকাশক-ব্যবসায়ীদের বঞ্চিত করতে ট্যাগের নোংরা ব্যবহার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। 

যে যার মতো, যখন-তখন, যেখানে-সেখানে, যাকে-তাকে এই ট্যাগের বৃত্তে বন্দি করে স্বার্থ হাসিল করছে অথবা বিকৃত সুখ উপভোগ করছে। আমরা এমন একটা সময়ে বসবাস করছি, যখন পুরো পৃথিবী দুইটা ভাগে বিভক্ত। মুসলিম আর অমুসলিম। মধ্যিখানে আর কিছুই নেই। ‘বুশ ডক্ট্রিন’ যদি খেয়াল করেন; দেখবেন সাম্রাজ্যবাদ বলছে—‘হয় আমাদের পক্ষে, না হয় বিপক্ষে, হয় বন্ধু নয় শত্রু; মধ্যপন্থা বা নিরপেক্ষতা বলে কিছু নেই।’ তখন আমাদের দেশের মুসলিম, অথচ কথা বলেন সাম্রাজ্যবাদের ভাষায় অথবা অমুসলিমের ভাষায়: কখনো কখনো ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষ হয় এই দেশের একদলের একমাত্র বুদ্ধিজীবীতা ও তৎপরতা। তাদের ভাষিক ও রাজনৈতিক তৎপরতা শুধুই এই দেশের ধার্মিক জনতার বিপক্ষে চলতে থাকে। 

এই ট্যাগিং সংস্কৃতিটার দীর্ঘ ইতিহাস থাকলেও আমাদের জেনারেশন স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে ‘রাজাকার-আলবদর’ ট্যাগের মাধ্যমে ট্যাগিং-রাজনীতির সঙ্গে পরিচিত হই। স্বাধীনতা সংগ্রাম চলাকালীন সময়ে যেমন হানাদার অধ্যুষিত এলাকায় কাউকে ‘মুক্তি’ বানিয়ে ফাঁসিয়ে দিত একদল ধান্ধাবাজ; ঠিক তেমনই মুক্তিবাহিনী অধ্যুষিত এলাকায় কাউকে ‘রাজাকার’ বানিয়ে ফাঁসিয়ে দিত সেখানকার ধান্ধাবাজেরা। কিন্ত স্বাধীনতার পর এই দেশের দাড়িওয়ালা ও ধার্মিক মানুষের জন্য এক ভয়াবহ অভিজ্ঞতার নাম ‘রাজাকার-আলবদর’ ট্যাগিং। নাটক সিনেমায়, গল্প উপন্যাসে দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষটিকে রাজাকার ও আলবদর চরিত্রে অভিনয় করিয়ে করিয়ে এই দেশের সাধারণ মানুষের মনস্তত্বে ‘দাড়ি-টুপি-পাঞ্জাবি’ মানেই রাজাকার-আলবদর চিন্তাটা প্রোথিত করে দিয়েছে একদল ধান্ধাবাজ। 

স্বাধীনতার পরে জন্ম নেওয়া তরুণদেরকেও দমাতে না পেরে রাজাকার বলে গা,লি দেওয়া হয় আমাদের সোসাইটিতে। যদিও শিবির করার কারণে কারও ওপর জুলুম বৈধ হতে পারে না। এরপরেও মাদরাসাপড়ুয়া কাউকে কাউকে ঠেকাতে শিবির ট্যাগ লাগিয়ে দেয় স্থানীয় রাজনীতিকরা। অথচ অনুসন্ধানে দেখা যায়, ট্যাগকৃত ব্যক্তি পুরো জীবনে কোনো দিন কোনো রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গেই জড়িত না; বরং জামাত-শিবির অপছন্দ করা লোক। শুধু দাড়ি-টুপির কারণে তাকে একটা ট্যাগ দিয়ে হয়রানি করার ন্যায্যতা দেওয়া হলো। এমনকি এই দৃশ্য হিন্দু ব্যক্তি ও পাহাড়ি উপজাতি নাগরিক কারও কারও সঙ্গে ঘটেছে মর্মেও খবর বেরিয়েছে। 

এই প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ে গেল। শিবির সন্দেহে কোনো এক তরুণকে ভার্সিটির ছাদে নিয়ে যায় কয়েকজন। কথাবার্তার একপর্যায়ে তাকে ছাদ থে,কে ফে,লে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমন সময় সেই তরুণ বলে উঠল—‘ভাই আপনারা আমাকে কী মনে করছেন? আমি তো হিন্দু!’ এরপরেও তাদের বিশ্বাস হয়নি। পেন্ট খুলেই তবে শেষ রক্ষে হয়েছিল সেই যুবকের।

সামহোয়্যারইন ব্লগে ব্লগিং করার সময় দেখতাম এক্টিভিস্ট ব্লগাররা নানা রকমের ইভেন্ট করত। ব্লগীয় পলিটিক্স, সিন্ডিকেটের কারণে একজন অন্যজনের বিপক্ষে থাকত। দেখা যেত, পারিবারিকভাবেই কট্টর আওয়ামী লীগ একজন একটা ইভেন্ট করছেন; তখন সিন্ডিকেটের কারণে অন্য ব্লগার তার প্রতিপক্ষ। এখন তাকে থা,মানোর পথ একটাই, ‘শিবির’ ট্যাগ অথবা ‘হিজ,বুতি’ (হিজচু,তিয়া) ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া। এরপর প্রমাণ হিসেবে ইসলাম ও মুসলমানের পক্ষে অথবা জামাত-হিজ,বুত প্রশ্নে মানবাধিকার বিষয়ে কথা বলা কিংবা কোনো হুজুরের সঙ্গে ছবি ইত্যাদি উপস্থাপন করা। অপর দিকে কেউ সত্যিই সেই রাজনৈতিক মতাদর্শের কিন্তু তার ভালো কাজকে ঠেকাতে সেই একই ট্যাগ ব্যবহার করা হতো। এখনো হচ্ছে নানাভাবে।

এসব ট্যাগের আবার আছে নানা রকমফের। কিছু আছে রাজনৈতিক। কিছু আছে ইসলামি ঘরানায়। কিছু আঞ্চলিক। সময়মতো ডিহিউমেনাইজ করার জন্য স্থান-কাল-পাত্রভেদে একেকটাকে ব্যবহার করা হয়। কখনো কখনো সেইসব ট্যাগকেও বিকৃত উচ্চারণে লেখা ও বলা হয়ে থাকে। 

শিল্প-সাহিত্যে ট্যাগ-রাজনীতি আরও ভয়ংকর। রবীন্দ্র ঘরানার কাছে কাজী নজরুল ইসলাম গুরুত্বহীন। হুমায়ুন আজাদ নজরুলকে ‘নরজুল’ বলে ব্যঙ্গ করতেন। কেউ কেউ নজরুলকে সাম্প্রদায়িক ট্যাগও দিতে চায়। ফররুখ আহমদ ‘ইসলামি রেনেসাঁর কবি’ ট্যাগের কারণে আলোচনাতেই থাকেন না। সচেতনভাবে আমাদের মিডিয়া ফররুখকে আড়াল করে রাখে। আল মাহমুদকেও জামাত ট্যাগ দিয়ে এড়াতে চান সেক্যুলার সমাজের অনেকেই। শুধু ‘ইসলামি’ ট্যাগের কারণে বাংলার পূর্ণ ইতিহাস নিয়ে ঐতিহাসিক উপন্যাস লেখা শফিউদ্দিন সরদার কোনো রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও পুরস্কার পাননি। শিল্প-সাহিত্যের আরেক শয়তানির নাম ‘মাদরাসার ছাত্র’ ট্যাগ। মাদরাসাপড়ুয়া যারা সাহিত্য ও শিল্প চর্চা করতে আসেন; তাদেরকে মিডিয়ার সিনিয়র পার্সনরা শুরুতে ‘প্রগতিশীল মাদরাসার ছাত্র’ ট্যাগ দিয়ে নানা রকমের ভাবালুতা দেখান। এরপর শুরু করেন তাদেরকে নিজেদের মতো গড়তে। যারা লোভের মোহে তাদের দিকে ঝুঁকে যায়; তাদেরকেও একটা সময়ের পরে ছুড়ে ফেলেন। আর যারা নিজের আদর্শের জায়গায় স্থির থাকেন, তাদেরকে প্রতিক্রিয়াশীল বলে দূরে ঠেলে দেন। কবিতা গল্পে আরবি-ফার্সি শব্দ, ধর্মীয় অনুষঙ্গ অথবা ইসলামি ইতিহাসের মিথ বা চরিত্রকে পজেটিভ ব্যবহার করলে সেই লেখক ও কবিকে তারা আর স্পেস দেন না। তখন সেই ‘প্রগতিশীল মাদরাসার ছাত্রের’ নাম হয়ে যায় অর্থোডক্স।

প্রগতিশীল ঘরানায় কমন যে-ট্যাগগুলো ব্যবহার করে; প্রতিক্রিয়াশীল, রাজাকার-আলবদর, আল শামস, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের শক্তি, একাত্তরের চেতনা, মৌল,বাদী, মোল্লাতন্ত্র, জ,ঙ্গি, তা,লেবা,ন, জামাত-শিবির, হিজ,বুতিয়া (হিজ,চু,তিয়া), কাঠমোল্লা, হেফাজত, ছা,গু, পা,কি ইত্যাদি।

ইসলামি ঘরানা যে-ট্যাগগুলো সেক্যুলারদের জন্য ব্যবহার করে; প্রগতিস্টি,টিউট, সেকুলা,ঙ্গার, চেতনা,ফেক, শাহবা,গী, না,স্তিক, মুর,তা,দ, ভা,দা, ভা,কু ইত্যাদি।

ওদিকে আওয়ামী লীগ নিজেরা নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করে কাউয়া, হাইব্রিড আলীগ ইত্যাদি।

ইসলামপন্থিরা নিজেদের মধ্যে ব্যবহার করে, মডারেট, আহলে হাদিস, আলিয়া, কওমি, তাবলিগি, এতাআতি, ওয়াজহাতি, দেওবন্দি, বেদাতি, ওয়াহাবি, নজদি, সালাফি ইত্যাদি।

এইসব ট্যাগিং সব সময়ই নেগেটিভলি ব্যবহার হয় এমনটা না। তবে চাইলেই কেউ এসবকে নেগেটিভলি ব্যবহার করতে পারেন। ক্ষমতাসীন সব সময়ই ক্ষমতাহীনকে, অযোগ্য মুনাফেক যোগ্য ব্যক্তিকে, হিংসুক সফল ব্যক্তিকে এইসব ট্যাগিং রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে ফেলে বিব্রত ও বঞ্চিত করতে চেষ্টা করে।

নতুন কিছু ট্যাগ পজেটিভ থেকে ধীরে ধীরে নেগেটিভিটির দিকে যাচ্ছে। সাহেবজাদা, পিরজাদা, আল্লামা, বুদ্ধিজীবী এই কয়েকটা ট্যাগ সম্প্রতি ওজন হারিয়েছে অতি ব্যবহার, বাজে ব্যবহার ও যত্রতত্র ব্যবহারের কারণে। অপর দিকে এইসব লকবধারীদের তৎপরতা ও অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণও এর পেছনে ক্রিয়াশীল।

শৈশবে শুনতাম, মিছিল হতো ‘একটা দুইটা শি,বির ধ,র; সকাল বিকাল না,স্তা ক,র’। তেরো সালে শুনেছি ‘একটা দুইটা হে,ফাজত ধ,র; সকাল বিকাল না,স্তা ক,র’। ব্লগে গিয়ে শুনেছি ‘ছা,গুদের’ ধরে কাচ্ছি রান্নার আলাপ। ভাষারাজনীতির পথ ধরে এইসব সংবিধান বিরোধী আলাপও সামাজিক ভ্যালু পেয়েছে। আরেকটা নতুন ট্যাগের ভয়ে এইসব অনাচারমূলক ট্যাগিং নিয়ে কেউ কথা বলতে সাহস করছে না। ফলে ট্যাগিং রাজনীতি একসময় এসে জুলুমের ক্ষেত্র তৈরি করেছে। জালিমের জন্য ন্যায্যতা এনেছে। 

সেক্যুলার এরিয়ায় ইসলামের প্রতি সহনশীল হলেই দমনের জন্য যেই ট্যাগের দরকার, সেই ট্যাগ তার গায়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়। আবার ইসলামি ঘরানায় কাউকে দমাতে হলে নানা রকমের ট্যাগ থেকে মানানসই বুঝে দিয়ে দেওয়া হয়। কওমি ঘরানার সবচেয়ে কমন ট্যাগ হলো ‘দালাল’। সরকারি চাকুরি, চাকুরির বদলি, ব্যবসায়িক লাইসেন্সসহ যেকোনো ধরনের অধিকারের প্রশ্নে প্রতিপক্ষ দুই ধরনের তৈরি থাকে। একটা রাজনৈতিক আদর্শিক ও আরেকটা ব্যক্তিগত আক্রোশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আপনাকে বানাবে জামাত-শিবির নতুবা জ,ঙ্গি। বিএনপি ক্ষমতায় আপনাকে বানাবে আওয়ামী লীগ। 

ব্যাপারটা যদি হয় স্থানীয়, তাহলে আপনাকে হয়তো বঞ্চিত করবে মমিসিঙ্গা বলে নয়তো নোয়াখাইল্যা বলে। অথবা সিলেটি বা চিটাগাইঙ্গা বলে। কখনো কখনো এইসব ট্যাগের কারণে সুবিধেও মিলতে পারে। কিন্তু ট্যাগ সাধারণত মৌলিক অধিকার থেকে ব্যক্তিকে বঞ্চিত করতেই বেশি ব্যবহৃত হয়।

এই সমাজের আলেম, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, লেখক-সাহিত্যিক, কবি, এক্টিভিস্ট, সাংবাদিক, মিডিয়া, প্রশাসন, দল-পার্টি, পঞ্চায়েত, সমাজ সবাই কোনো-না-কোনোভাবে ট্যাগিংয়ের রাজনীতি করেন। কখনো কখনো নিরীহ, নিরপরাধ, সরল-সহজ মানুষও এসব ট্যাগের কারণে অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকেন। আমার অভিজ্ঞতায় আমি দেখেছি, বিসিএসে সকল ধাপ শেষ করে ভেরিফিকেশনে এসে পলিটিক্যাল একটা ট্যাগের কারণে সেই প্রার্থীর নামে গত তিন বছরেও জিও (GO) জারি হয়নি।

এমনও দেখেছি, প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হয়েছে, শুধু একটা মিথ্যা ট্যাগ তার নিয়োগ আটকে দিয়েছে। বহুদিন বহুজনের দুয়ারে ঘুরে চাকরিতে জয়েন করেছে। এমনকি মাদরাসার ছাত্র স্মার্ট হওয়ার কারণে শিবির ট্যাগ পেয়েছে। ট্যাগদাতারা বলেছে—‘শিবির না হলে অত স্মার্ট হয় কেমনে!’ 

ট্যাগ ও ট্যাগিংয়ের ইতিহাস এবং বঞ্চনার গল্প অনেক লম্বা। বহু ঘরে মা তার সন্তানের প্রতি আরোপিত ট্যাগের কারণে আর্তনাদ করছেন। বহু সন্তান ট্যাগের দৌরাত্ম্যে বাবার প্রমোশন আটকে যাওয়ায় ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে। আমাদের শিক্ষা ও উন্নয়ন আমাদের মধ্যে উদারতার দীক্ষা ঢেলে দিতে পারেনি। যেদিন আমরা শিক্ষার সঙ্গে দীক্ষা এবং উন্নয়নের সঙ্গে শিষ্টাচার শিখব, সেদিন হয়তো বদলাবে আমাদের পরিবেশ। 

আল্লাহ আপনি উত্তম ফায়সালাকারী।

সাইফ সিরাজ

কবি ও বিশ্লেষক

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ