তুমি আমার নীল ঝিনুকের গল্প - Tumi Amar Nil Ghinuker Golpo - লেখিকা ফারজানা মিতু

বই : তুমি আমার নীল ঝিনুকের গল্প 
লেখক : ফারজানা মিতু 
মূল্য : ২২০/-
পৃষ্ঠা : ১০৭



মূর্ছনা সবেমাত্র এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করলো। পরীক্ষা শেষ করে একটার পর একটা বই পড়েই যাচ্ছে। সব বই-ই আদিত্য রায়হানের। আদিত্য রায়হান একজন বিখ্যাত লেখক। তাঁর লিখা সব বই-ই পড়া শেষ মূর্ছনার। তারপরও পড়া বইগুলোই আবারও পড়তে থাকে। এই লেখকের লিখা এতো ভালো লাগে তার। আদিত্য রায়হান বলতে পাগল মূর্ছনা। তার ঘরের একটা দেয়ালে আদিত্য রায়হানের বিশাল ছবি লাগানো আছে। সেই ছবির সাথে একা একাই কথা বলে যায় মূর্ছনা। মনের যত কথা সব বলে এই ছবির সাথে। এটা মূর্ছনার বাসার সবাই জানে।

হঠাৎ একদিন মূর্ছনার বাবা একটা প্রোগ্রামে দাওয়াত পায়, যেখানে আদিত্য রায়হানও আসবে। মূর্ছনার বাবা মূর্ছনাকেও সাথে নিয়ে যেতে চাইলে ওর আনন্দ যেন আর ধরে না। সারারাত জল্পনা কল্পনা করতে থাকে আদিত্য রায়হানের সাথে দেখা হলে কি কি বলবে।
সে একটা নীল শাড়ি পরে প্রোগ্রামে যায়। আদিত্য রায়হানকে দেখে যেন তার নিঃশ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম। কোনো কথাই বলতে পারে না। তবে লেখকের ফোন নাম্বারটা নিয়ে নেয়।

আদিত্য রায়হান সম্প্রতি একটা উপন্যাস লিখতেছে। কিন্তু নায়িকার চরিত্রটা ঠিক আনতে পাচ্ছে না। প্রোগ্রামে মূর্ছনাকে দেখে আদিত্য চমকে যায়, এমন একটা মেয়েকেই তো উপন্যাসের নায়িকার চরিত্রের জন্য মনে মনে খুঁজে বেড়াচ্ছে আদিত্য রায়হান। 

আদিত্য রায়হান রাত জেগে লিখালিখি করে। তার স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়লে শুরু হয় মূর্ছনার সাথে ফোনালাপ। এক সময় দেখা করা পর্যন্ত এগিয়ে যায়। তারপর তাদের মাঝে গড়ে ওঠে সম্পর্ক।
আদিত্য রায়হানের স্ত্রী আদিত্যকে অনেক ভালোবাসে। সে আদিত্য আর মূর্ছনার অনেক ব্যাপারই আন্দাজ করতে পারে। নিরবে কষ্ট পেতে থাকে।

ত্রিমুখী এ সম্পর্কের শেষ পরিণতি কী ঘটে যে "তুমি আমার নীল ঝিনুকের গল্প"টা আর লিখা হয় না??
জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।

চরিত্র : মূর্ছনা,আদিত্য রায়হান, রিদিতা,সাজু,নাদিম,রুপা,কবির সাহেব,রেহানা বেগম, ঝুমুর, ঝরণা।

মানুষের কল্পনার জগৎ বিশাল আর সেই কল্পনার জগতে মানুষের দেখা হয় এমন মানুষের সাথে,যার অস্তিত্ব আমরা লালন করি নিজের ভিতর নিভৃতে কোথাও। যার সাথে চলে দিবানিশির স্বপ্ন,কথামালা,আবেগ ও অনুভূতি। 

মূর্ছনা গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র। উপন্যাসের শুরুতে দেখা যায় সে সদ্য HSC পরীক্ষা শেষ করে বাড়িতে সময় কাটাচ্ছে।সারাক্ষণ সে নিজের ঘরে বই নিয়ে বসে থাকে।আদিত্য রায়হান নামের একজন লেখক তাঁর পছন্দের।তার ঘরে আদিত্য রায়হান এর একটি ছবি বাধায় করে রেখেছে সে।দিবানিশি ছবির সাথে কথা বলে।মূর্ছনা পাগলের মতো ভালবাসে আদিত্য রায়হানকে।যার লেখায় মূর্ছনা খুঁজে বেড়ায় নিজেকে আর সেই সাথে নিজের ভিতর আঁকে সেই লেখকের ছবি।

একসময় একটি প্রোগ্রামে আদিত্য রায়হান এর সাথে মূর্ছনার দেখা হয়ে যায়।সাহস করে মূর্ছনা আদিত্যের নাম্বার নিয়ে আসে।আদিত্য মূর্ছনার মাঝে তার নতুন উপন্যাসের চরিত্র পরী কে দেখতে পায়।

ক্রমেই তাদের কথা বলা দেখা করা চলতে থাকে।আদিত্য বুঝতে পারে মূর্ছনাকে ছাড়া ওর পক্ষে আর লেখা সম্ভব না।আদিত্য দূর্বল হয়ে যায় মূর্ছনার প্রতি।

মূর্ছনা আদিত্যের লেখা পড়তে পড়তে ভালবেসে ফেলে তাঁকে,কিন্তু জানে না লেখক শুধু লিখেই চলে,পাঠকের আবেগ তাকে সবসময় ছুঁতে পারে না।মূর্ছনা আর আদিত্যের এই অসম প্রেম কখনও তাই ভাঙতে পারে না বাস্তবতার দেয়াল যেখানে আগেই দাড়িয়ে আছে রিদিতা নামের আরেকটি মানুষ। রিদিতা আদিত্য রায়হান এর স্ত্রী। 
মূর্ছনা তবুও ছুটে যায়,আর কিছু নয় শুধু একবার আদিত্য বলুক
তুমি আমার নীল ঝিনুকের গল্প।

কিন্তু যত দেয়াল থাকুক না কেন,সব মানুষকে ফিরতে হয় তার প্রিয়জনের কাছে, আদিত্য ফিরে এসেছিল যেভাবে সবাই ফেরে।সবাইকেই একদিন ফিরতে হয় শুধু কেউ কেউ ফিরতে বড্ড দেরি করে ফেলে।নীল ঝিনুকের গল্প তাই আর লেখা হয় না।


পছন্দের উক্তি
দুজন মানুষ পাশাপাশি থাকলেই যে দুজনার সবকিছু ভালো লাগবে সেটা ঠিক না। পাশাপাশি থাকাকে আমরা মিশে থাকা বলে ভুল করি।পাশাপাশি তো ভালো না বেসেও মানুষ থাকে তাই বলে কি তারা একে অপরকে ভালোবাসে??

মানুষের কল্পনার জগত বিশাল। আর সেই কল্পনার জগতে দেখা হয়ে যায় সেই মানুষের সাথে যাকে সে লালন করে নিজের ভেতর নিভৃতে কোথাও। মূর্ছনা পাগলের মত ভালোবাসে এমনি একজন মানুষকে যার বাস এমনি কোনো এক নিভৃতে কোথাও। আদিত্য রায়হান মানেই মূর্ছনার সেই কল্পনার জগত। যার লেখা বার বার পড়তে গিয়ে একসময় মূর্ছনা ভালোবেসে ফেলে সেই মানুষটিকেই। কিন্তু তার জানা নেই লেখক শুধু লিখেই চলে পাঠকের আবেগ সব সময় তাকে ছুঁতে পারে না। 
মূর্ছনা আর আদিত্য রায়হানের এই অসম প্রেম কখনো তাই ভাঙতে পারবে না বাস্তবতার দেয়াল, যেখানে অনেক আগেই দাঁড়িয়ে আছে রিদিতা নামের একজন। মূর্ছনা তবুও ছুটে যায়, আর কিছু নয় আদিত্য একবার শুধু বলুক তুমি আমার নীল ঝিনুকের গল্প! 

অসম প্রেমের বৈসাদৃশ্য নিয়ে রচিত তুমি আমার নীল ঝিনুকের গল্প...

রিভিউটি লিখেছেনঃ Mubin Muna

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ