জাগরণে যায় বিভাবরী - সুস্মিতা জাফর | Jagrane Jay Bibhavori

  •  বই: জাগরণে যায় বিভাবরী
  • লেখক: সুস্মিতা জাফর
  • প্রকাশনী: চলন্তিকা
  • প্রকাশকাল: অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ২০২২
  • প্রচ্ছদ ও অলঙ্করণ: জারীন তাসনিম
  • মুদ্রিত মূল্য: ৩৫০ টাকা

 আমার একদম ঠিক মুখের সামনে, এক জোড়া ধবধবে ফর্সা পা ঝুলছে! আর আমি হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। হ্যাঁ, ধবধবে ফর্সা এক জোড়া পা। পঁচিশ বছর আগে ঢাকার এক প্রাইভেট হাসপাতালে এই পা জোড়াকে দেখেই আমি বাবাকে বলেছিলাম, ‘বাবুকে জুতা পরিয়ে দাও, তাত্তাড়ি’। ”

উপরের অংশটুকু দিয়ে সূচনা হয় “জাগরণে যায় বিভাবরী” উপন্যাসটির। “জাগরণে যায় বিভাবরী” লেখক সুস্মিতা জাফরের লেখা প্রথম উপন্যাস। এটি হরর ফ্যান্টাসি জনরার থ্রিলার উপন্যাস। উপন্যাসটি রচিত হয়েছে শিউলিবাড়ি ও বাড়ির সদস্যদের রহস্য নিয়ে।

অভয়নগর নামের এক মফস্বলে বিশাল প্রাসাদের মতো তিনতলা একটি বাড়ি রয়েছে, যা ‘শিউলিবাড়ি’ নামে পরিচিত। পারিজাতের পরিবারের এই বাড়িটিতে বসবাস। ছোটবেলা থেকেই পারিজাতের মা পারিজাত কে কোন এক কারণে পছন্দ করতেন না। পারিজাতের মার সকল মনোযোগ ছিল ছোট মেয়ে ইরাবতী, জমজ ছেলে তারিন-অরিন এবং পিয়ালের জন্য। মারিয়া আন্টির আদর-যত্নে পারিজাত বড় হয়েছে। পারিজাতের মায়ের এমন আচরণের কারণ কী?

পারিজাতের ছোটবেলার খেলার সাথী ছিল দিলু। দিলুর কিছু অস্বাভাবিক আচরণ পারিজাতের নজরে আসে। এমন অস্বাভাবিকতার পেছনের কারণ কী ছিল?

আর মসৃণ খাড়া দেয়াল বেয়ে উঠে যায়, ওটা কি মানুষ না অন্যকিছু?

পারিজাতের ছোটবোন ইরাবতী জার্মানি যাওয়ার আগের দিন আত্মহত্যা করেছিল। সদা হাস্যোজ্জ্বল, চটপটে, মেধাবী, সুন্দরী- ইরাবতী কেন আ*ত্ম*হ*ত্যা করল?

পারিজাতের প্রেমিক পুরুষ সুহাসের সাথে দুর্ঘটনা ঘটেছিল। এইসব কী শুধুই দুর্ঘটনা নাকি এর পিছনে রয়েছে বড় কোনো চক্রান্ত?

এছাড়া, হঠাৎ করে পারিজাতের ঢাকার বাসায় কেন এমন সমস্যা শুরু হয়েছিল?

সবগুলো প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে “জাগরণে যায় বিভাবরী” বইটি পড়তে হবে।

 থ্রিলার গল্প বা উপন্যাস পড়তে বরাবরই ভালো লাগে। আর এই থ্রিলার গল্প বা উপন্যাসে যদি  ভয়ের  ছোঁয়া থাকে, তাহলে পড়ার আগ্রহ আরো দ্বিগুণ হয়ে যায়। “জাগরণে যায় বিভাবরী” এমনি একটি উপন্যাস।

উপন্যাসটি বর্ণিত হয়েছে পারিজাতের ভাষায়। বইটির প্রথমেই শুরু হয় ইরাবতীর আ*ত্ম*হ*ত্যার কাহিনী দিয়ে। প্রথম পৃষ্ঠা থেকেই রহস্যের সূচনা হয়। উপন্যাসটির যত সামনে আগাচ্ছিলাম, তত যেন রহস্য ঘণীভূত হচ্ছিল। কোনকিছু আগে থেকে ধারণা করা সম্ভব ছিল না। থ্রিলারের সাথে হরর এর ছোঁয়া উপন্যাসটি পড়ার আগ্রহ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শিউলিবাড়ি নামক রহস্যপুরীর রহস্য জানবার জন্য বইটির মধ্যে ডুবে যেতে হয়েছে। 

শিউলিবাড়ির রহস্য ও বাড়ির মানুষদের রহস্যের সমাধান করতে পাঠকদের বইটির শেষ পৃষ্টা পর্যন্ত যেতে হবে। এতসব রহস্য দেখে মাঝে মাঝে মনে হয়েছিল, লেখক শেষপর্যন্ত ঠিকঠাক সমাধান করতে পারবেন কিনা! কিন্তু চমৎকৃত হয়েছি এটি দেখে যে লেখক দারুণভাবে সমাপ্তি টেনেছেন। 

 বইয়ের প্রচ্ছদটি ছিল নজরকাড়া। শিউলিবাড়ির চিত্র প্রচ্ছদটিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বাড়ির সামনের শিউলি গাছটি বইটির প্রচ্ছদে অন্যরকম সৌন্দর্য দান করেছে। চমৎকার এই প্রচ্ছদটি করেছেন জারীন তাসনিম। বইটির নামকরণ ও কাহিনীর সাথে একদম মানানসই। 

 লেখক সুস্মিতা জাফর বইয়ে পাখিদের সম্পর্কে নানা কিছু উল্লেখ করেছেন। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদের অনেক অজানা তথ্য জানতে পেরেছি। পাখিদের সম্পর্কে এতসব তথ্য লেখক দিয়েছেন, যা পাঠকদের রীতিমতো মুগ্ধ করবে। 

উপন্যাসটির প্রতিটি পর্বের আলাদা আলাদা নাম ছিল। ১৪৯ পৃষ্ঠার উপন্যাসটিতে রয়েছে ২০ টি পর্ব। পর্বের নামগুলো হলো: ইরাবতী, ভয়, সুহাস, ছায়ামানব, পক্ষীরাজ্য, পারফিউম, নতুন স্যার, পেছন বাড়ি, প্রত্যাবর্তন, দিলুর গল্প, ডায়েরি, পোট্রেট, বন্ধুত্ব, রহস্যপুরীর রহস্য, অভিশপ্ত সময়, প্রতিবিম্ব, পিয়ালের চিঠি, জলদেবী, মারাত্মক ভুল এবং শিউলি বাড়ি। উপন্যাসটিতে নতুনত্ব এসেছে এমন পর্ব আকারে থাকার কারণে।

 উপন্যাসটির কিছু পৃষ্ঠাতে চমৎকার কয়েকটি চিত্র অঙ্কিত ছিল।  চিত্রগুলো উপন্যাসটির কাহিনীর সাথে সম্পর্কিত। এই চিত্রগুলো বইয়ে অন্যরকম সৌন্দর্য যোগ করেছে।

সবশেষে বলবো, “জাগরণে যায় বিভাবরী” বইটি আমার কাছে অদ্ভূত ভালো লেগেছে। যাদের হরর ফ্যান্টাসি জনরার থ্রিলার উপন্যাস পড়তে ভালো লাগে, তাদের কাছে দারুণ এই বইটি অবশ্যই ভালো লাগবে। পাঠকদের মন জয় করে নিতে উপন্যাসটি সক্ষম। আশা করি লেখক সুস্মিতা জাফর ভবিষ্যতে পাঠকদের জন্য আরো চমৎকার সব উপন্যাস নিয়ে আসবেন। লেখকের আগামীর জন্য নিরন্তর শুভকামনা রইলো। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ