সে এখন ভাবছে সে মাজেদা খালা আর বাদলকে পাবে কই। তারপর ভাবল হিমুর প্রতিটা দিনে তো তাদের ভূমিকা থাকে না। বরং বেশিরভাগ দিনই হিমুর কাটে একা। তাই মাজেদা খালা আর বাদলের অনুপস্থিতি তাকে হিমু হতে খুব একট্ব অসুবিধার সৃষ্টি করবে না। নিজের মনে এই কথা বলেই সে হাঁটতে থাকল। হাতে ঘড়ি নেই, পকেটে মোবাইল নেই। এক প্রকার ভালো লাগাও কাজ করছে মনের ভিতরে৷ কোন কিছু চুরি-ছিনতাইয়ের ভয় নেই। পায়ে অবশ্য স্যান্ডেল আছে। আর পড়নে হলুদ পাঞ্জাবির বদলে সাদা পাঞ্জাবি। এইটুকু পার্থক্য বাহ্যিক দৃষ্টিতে। তবে ভিতরে ভিতরে আরো অনেক পার্থক্য হয়ত অনেক রয়েছে। হয়ত নেই৷ হঠাৎ হিমুকে জিজ্ঞেস করল একজন,'' ভাই হিমুদের বাসা কোথায় বলতে পারবেন? ''
প্রশ্ন শুনে চমকে উঠল সুদর্শন। পরক্ষণেই খানিক টা লজ্জা পেল। সে তো এখন হিমু। হিমুতো সহজে চমকায় না। না, আরো সতর্ক হতে হবে, হিমু হওয়া এত সহজ কাজ না। সে ভাবল সে আজ হিমু হয়েছে। আর আজই এমন প্রশ্নের মুখোমুখি। প্রশ্নকর্তা কি তবে মিসির আলি। মিসির আলি একজন সাইক্রিয়াটিস্ট, তিনিও হুমায়ুন আহমেদের সৃষ্ট আরেক চরিত্র। হিমু অর্থাৎ সুদর্শন নিজেকে সামলে নিয়ে উত্তর দিল, ''জ্বি আমিই হিমু''
কিছুক্ষণ কথা বলার পর বুঝা গেল কেউ অনলাইনে খাবার অর্ডার দিয়েছে। বিলও পরিষোধ হয়েছে অনলাইনেই। তবে সুদর্শন, হিমু নামে এই এলাকায় কাউকে চেনে না। কেউ হয়ত মজা করে হিমু নামে অর্ডার করেছে। তার খাওয়ার নিয়ে নিলে কেমন হয়? ব্যাটার মজা, সাজায় পরিণত হয়ে যাবে। তাকে বুঝতে হবে শুধু ঘরে বসে, অনলাইনে হিমু নাম দিয়ে খাবার অর্ডার দিলেই কেউ হিমু হয়ে যায় না।
সে ডেলিভারিম্যানকে বলল,'' দিন, খাবার দিন, আর বাসায় যেতে হবে না। ''
সঙ্গে সঙ্গে লোকটি রাজি হয়ে গেল। সুদর্শনের স্বাক্ষর নিয়ে খাবার দিয়ে লোকটি চলে যেতে লাগল। সুদর্শনের হঠাৎ মনে পড়ল চুরি করা হিমুর চরিত্রে নেই। এটা তো একপ্রকার চুরিই হলো। খাবার চুরি। সে নিজে খাবারটা না নিয়ে যদি ডেলিভারি ম্যানকেই দিয়ে দেয় তাহলে কেমন হয়? লোকটি মনে হয় চমকে যাবে খানিকটা। ভালো হবে। মানুষকে চমকানোই তো হিমুর কাজ। সে লোকটি ডাকল।
'' ভাই এই খাবারটি আপনি খেয়ে নিন। আমি আপনাকে এই খাবারটা দিয়ে দিলাম। আপনি মনে হয় সকাল থেকে না খেয়ে আছেন। ''
বলেই খাবারটি তার হাতে দিয়ে চলে গেল সুদর্শন। লোকটি হয়ত ভ্যাবাচ্যাকার মত দাঁড়িয়ে আছে। কিংবা লোকটি যদি সারাদিন না খেয়ে থাকে তাহলে হয়ত তার চোখে পানি চলে এসেছে। এটা হওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীন নয়। যাই হোক, হিমু হয়ে দিনের শুরুটা ভালোই হলো। দেখা যাক দিনের বাকিটা সময় কেমন কাটে!
চলবে...
লেখক : মাহির মোসলেহ ফুয়াদ
জনিয়র কন্টেন্ট রাইটার
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....