শেষ চিঠি - মাহিন মাহমুদ | Sesh Chithi - Mahin Mahmood

  • বই : শেষ চিঠি
  • লেখক : মাহিন মাহমুদ
  • প্রকাশনা: মাকতাবাতুল হাসান
  • মূল্য: ১৫০/-
  • বাধাই ধরন: পেপার ব্যাক


বইপড়া অভ্যাস মোটামুটি ছোটবেলা থেকে। লেখক 'মাহিন মাহমুদ' এর লেখা ''আঁধার মানবী'' আর ''শেষ চিঠি'' পড়ার ইচ্ছা ছিলো অনেকদিন থেকেই। কিন্তু, কোনোভাবে কেনা হচ্ছিলোনা। পড়াও হচ্ছিলোনা। বিভিন্নজনের রিভিউ পড়ে পড়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মিটিয়েছি বলা চলে। অবশেষে কিছুদিন আগে পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে।


বইটা শুরু করার পর থেকেই মনে হচ্ছিলো, এত দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে কেন! তবে বইটা এভাবে শেষ হবে ভাবিনি। মাঝে মাঝেই মনে হয়েছে, 'এখন থেকে গল্পটা নিশ্চয়ই এভাবে টার্ন নেবে.... গতানুগতিক লেখনী..' কিন্তু পরক্ষণেই ধারনা পালটে গেছে। এরকম একবার না, বহুবার হয়েছে। আমার সাহিত্যপাঠ জগৎটা খুব বেশি সমৃদ্ধ না হলেও, ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতাতেই মনে হয়েছে বইটা বেশ চমৎকার।


বইটার গল্প একজন তরুণ আলেম লেখক 'আহসান' ও মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া মেয়ে 'নওশিন'কে নিয়ে। যার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড ধার্মিক হলেও সে নিজে আর দশটা তথাকথিত আধুনিকা মেয়েদের ধ্যানধারণা লালন কারী। এই গল্পে আরও আছে ৫ই মে'র নির্মম বাস্তবতা, যার নাম 'শামীম'। আছে এদেশের বহু মুখোশধারীর একটি রূপ যার নাম 'সোহেল'। এমনি নানামুখী শিক্ষণীয় চরিত্র দিয়ে সাজানো ''শেষ চিঠি''। এই সমাজে অনেক নওশীন পাওয়া গেলেও, আহসানদের খুঁজে পাওয়া মুশকিলই বটে। 'সায়েমা'র জন্য খারাপ লেগেছে। বাকি অনুভূতিটা পাঠকদের জন্যই তোলা থাক। তারা নিরাশ হবেনা বলেই আমার বিশ্বাস।


অফটপিক: সামান্য কিছু দোষত্রুটিও চোখে পড়েছে। বিশেষত: আহসানের মায়ের নাম প্রথমে লেখা ছিলো 'রাহেলা' পরবর্তীতে সেটা 'জাহানারা'য় কিভাবে জানি রূপান্তর হয়ে গেল! আর কিছু সাধারণ বানানে ভুল চোখে পড়েছে। আশাকরি লেখক পরবর্তীতে এই ছোটখাটো ব্যাপারগুলিকে গুরুত্ব দিবেন।


সমালোচনার উদ্দেশ্য লেখককে নিরুৎসাহিত করা নয় বরং লেখককে জানানো- 'আমরা বই পড়ছি। খুব ভালোভাবে পড়ছি। কিছু শেখার উদ্দেশ্যেই পড়ছি এবং শিখছিও। এরকম ইসলামি উপন্যাস আরও চাই। আরও নতুনত্ব নিয়ে, আরও বেশি ভালোলাগা নিয়ে।'
পরিশেষে একটা কথাই বলব। লেখক বইটার মাধ্যমে যেই ম্যাসেজটা দিতে চেয়েছেন সেটা উনি বইয়ের শুরুতেই উল্লেখ করেছেন এভাবে, 'পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়'...... 

তবে আমার মতে, চিন্তা-ফিকির করনেওয়ালাদের কাছে বইয়ের সবখানেই কিছু না কিছু শেখার খোরাক রয়েছে। আল্লাহ লেখককে এই ধারা অব্যাহত রাখার তাওফিক দান করুক। আমীন।
শেষ চিঠি উপন্যাসের প্রধান দুটি চরিত্র নওশিন এবং আহসান উভয়ই ধার্মিক পরিবারের। 

আহসান অত্যন্ত ধার্মিক, ভদ্র এবং একই সাথে ইসলামি উপন্যাসিক এবং আলেম লেখক। অপসংস্কৃতির উত্তাল তরংগের বিপরীত স্রোতধারা তৈরীর লক্ষে যে অবিরাম লিখে যায়।আর নওশিন অত্যন্ত রাগী, অবাধ্য এবং পথভ্রষ্ট বলা যায়। নওশিনের বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে ধর্মীয় ধ্যানধারণাকে আকরে ধরেই ডাক্তার হয়ে মহিলাদের চিকিৎসা দিবে। কিন্তু মেডিকেলে পড়ে দিন দিন মেয়ে পথভ্রষ্ট হয়ে যায়। তার মনে হয় ধর্মভীরুতা মূলত আধুনিকতা ও  স্বাধিনতার বিপরীত। 


স্বনামধন্য এই লেখক আহসানকেই পাত্র হিসেবে পছন্দ করেন নওশিনের বাবা-মা। কিন্তু নওশিনের পছন্দ সোহেল নামের এক ডান্সারকে। যে কিনা নারী প্রাচারকারী। ছেলেটির সব অপকর্ম জেনে ফেলে কষ্ট পেয়ে বিয়েতে মত দিলেও বিয়ের আগের দিন নিজের পছন্দের মানুষের সাথে পালিয়ে যাওয়ার প্লান করে নওশিন। আর অন্যদিকে আহসান সব জেনেও বিয়ে করে নওশিনকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে অপেক্ষার দিন গুনতে থাকে। কি হবে তাদের শেষ পরিণতি? 
উপন্যাসটি এমনই যা একবার পড়লে বার বার পড়তে ইচ্ছা করবে। ইসলামিক অনেক উপন্যাস পড়েছি। কিন্তু এটা সবচেয়ে পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিলো

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ