- শাওনের বয়ানে হুমায়ুন
- সম্পাদনা - শোয়েব সর্বনাম
- প্রকাশনায় - অবসর
চিরকুটটা যিনি দিয়েছেন তিনি খ্যাতিমান পরিচালক, লেখক। তিনি হুমায়ূন আহমেদ। 'নক্ষত্রের রাত' নাটকের শুটিংয়ের সময় তিনি শাওনকে পাঠিয়েছেন অসংখ্য চিঠি, কখনো নাটকের স্ক্রিপ্টের পাতার ফাঁকে, কখনো এক কাপ চায়ের পিরিচে। তীব্র অধিকারবোধ আর প্রেম কখনো চেপে রাখেননি, সেইসব ছোট ছোট বাক্যে জানিয়ে দিয়েছেন তার অস্থিরতা আর একাকিত্বের কথা।
শাওন, হুমায়ূনের প্রথম প্রেম নন। প্রথমা গুলতেকিন আর দ্বিতীয়া শাওন ছাড়াও হুমায়ূনের জীবনে আরো প্রেম এসেছে, যার কিছু উল্লেখ আছে শাওনের বয়ানে, কিছু এখানে সেখানে।
তবে হুমায়ূন কি বহুগামী প্রেমিক পুরুষ ছিলেন? শাওনের দাবি, তার বইয়ের চরিত্রদের মতোই তাঁর নৈতিকতা ও একগামীতা সুদৃঢ় ছিল। শাওনকে যখন খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন হুমায়ূন, পারিবারিক জীবনে তিনি প্রচন্ড নিঃসঙ্গ। শাওনকে লেখা প্রতিটি চিরকুটেই তার সেই একাকিত্ববোধ ফুটে উঠে। দখিন হাওয়ায় কাটানো সময়গুলোর বর্ণনা পাঠকরা জেনেছি। ঈদের দিন এক বাটি সেমাইয়ের জন্য তার হাহাকার পড়েছি। ফ্ল্যাটে খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, তাই চেষ্টা করতেন শুটিংয়ের সময় খেয়ে নিতে। একা খেতে ভালো লাগতে না, শাওনের সঙ্গ আশা করতেন।
হুমায়ূন পেটুক নন, কিন্তু ভোজনবিলাসী ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন লেখায় লোভনীয় সব রন্ধনপ্রণালী পাওয়া যায়। খুব সাধারণ দেশী খাবার খেতে চাইতেন প্রায়ই। হুমায়ূন কি রাঁধতেন? খুব কম। নিজের রান্না তার নিজেরই পছন্দ হতো না। তিনি বাচ্চাদের সময় দিতেন, তাদের গোসল করাতেন। তবে লেখালেখির অভ্যাস একদিনের জন্যও বন্ধ হতো না।
খেয়ালী মানুষ ছিলেন সন্দেহ নেই। নির্মলেন্দু গুণের নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব পেয়ে, প্রতীক মেলাতে কুমিরের সন্ধানে নেমে যাওয়া হুমায়ূনের পক্ষেই সম্ভব। শাওনের মতে, 'হিমু'কে হুমায়ূন তুলে এনেছেন তাঁর বাবার আদলে, শুভ্রকে নিজের ছাঁচে। মিসির আলীও কি হুমায়ূনের প্রতিচ্ছবি নন? একা বাস করা, কাজের ছেলের সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাথে তো মিল পাওয়াই যায়।
উদারতা ছিল টাকা-পয়সার ব্যাপারেও। দু'হাতে খরচ করেছেন, সিনেমা বানিয়েছেন, ধার দিয়েছেন, ভ্রমণ করেছেন। ফ্ল্যাটে বন্ধু-বান্ধব, আড্ডার আয়োজন লেগেই থাকত। রয়ালিটির পেমেন্ট সবসময় ক্যাশে নিতেন। হুমায়ূন তাঁর উপন্যাসের পান্ডুলিপিগুলো হাতে লিখতেন, কম্পোজের পর মূল পান্ডুলিপি ছিঁড়ে ফেলতেন নিজের হাতে।
আকাশ্চুম্বী খ্যাতিসম্পন্ন এই মানুষের কাছে আসতো নারীভক্তদের চিঠি, ছবি, নানান প্রস্তাব। এমন বিখ্যাত, একই সাথে খেয়ালী, কিন্তু সংসারজীবনে আটপৌরে একজন মানুষের স্ত্রী হিসেবে জীবন কাটানো কতটা সহজ? কতটা কঠিন? একজন যা পারেননি, অন্যজন তা পেরেছেন। বিয়ের পর হুমায়ূন আহমেদ শাওনের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, 'কখনো আমাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলবে না তুমি, না কখনো বাসা ছেড়ে চলে যাবে।' একাকিত্বের প্রতি তাঁর আতংক এই কথাতেই টের পাওয়া যায়।
লেখক হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে চিত্রায়ণ করা বেশ কঠিন। গুলতেকিনের ক্ষোভে ভরা বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও 'তালাক' এর মতো কোনো অতিরঞ্জিত বইয়ের বর্ণনা যেমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তেমনি শাওনের বর্ণনাও যে 'সুগার কোটেড' হবে তাতে সন্দেহ নেই। নোভা-শীলা-বিপাশার তীব্র অভিমানের শেকড় কোথায়? হুমায়ূন যখন শাওনের প্রেমে পড়েন, গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর ইতোমধ্যেই সম্পর্কচ্ছেদ ঘটেছে। দশম শ্রেণির ছাত্রী শাওনের পক্ষেও কি সম্ভব ছিল এমন একজন জাদুকরকে ফিরিয়ে দেওয়া? যদিও শাওনের বয়ানে, তিনি লেখক হুমায়ূনকে না, মানুষ হুমায়ূনের জীবনের প্রদীপটাই ধরেছিলেন।
হয়তো শাওনই পেরেছিলেন তাঁর অন্তরের কষ্টগুলো ভুলিয়ে দিতে। অথবা কেউই হয়তো পারেননি। যে জন্যই হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন
এসেছিলাম,
দেখতে পেলাম
'কোথাও কেউ নেই',
আমার কষ্ট
খুবই পষ্ট
বোঝার মানুষ নেই।
শাওন, হুমায়ূনের প্রথম প্রেম নন। প্রথমা গুলতেকিন আর দ্বিতীয়া শাওন ছাড়াও হুমায়ূনের জীবনে আরো প্রেম এসেছে, যার কিছু উল্লেখ আছে শাওনের বয়ানে, কিছু এখানে সেখানে।
তবে হুমায়ূন কি বহুগামী প্রেমিক পুরুষ ছিলেন? শাওনের দাবি, তার বইয়ের চরিত্রদের মতোই তাঁর নৈতিকতা ও একগামীতা সুদৃঢ় ছিল। শাওনকে যখন খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরেন হুমায়ূন, পারিবারিক জীবনে তিনি প্রচন্ড নিঃসঙ্গ। শাওনকে লেখা প্রতিটি চিরকুটেই তার সেই একাকিত্ববোধ ফুটে উঠে। দখিন হাওয়ায় কাটানো সময়গুলোর বর্ণনা পাঠকরা জেনেছি। ঈদের দিন এক বাটি সেমাইয়ের জন্য তার হাহাকার পড়েছি। ফ্ল্যাটে খাবারের কোনো ব্যবস্থা ছিল না, তাই চেষ্টা করতেন শুটিংয়ের সময় খেয়ে নিতে। একা খেতে ভালো লাগতে না, শাওনের সঙ্গ আশা করতেন।
হুমায়ূন পেটুক নন, কিন্তু ভোজনবিলাসী ছিলেন। তাঁর বিভিন্ন লেখায় লোভনীয় সব রন্ধনপ্রণালী পাওয়া যায়। খুব সাধারণ দেশী খাবার খেতে চাইতেন প্রায়ই। হুমায়ূন কি রাঁধতেন? খুব কম। নিজের রান্না তার নিজেরই পছন্দ হতো না। তিনি বাচ্চাদের সময় দিতেন, তাদের গোসল করাতেন। তবে লেখালেখির অভ্যাস একদিনের জন্যও বন্ধ হতো না।
খেয়ালী মানুষ ছিলেন সন্দেহ নেই। নির্মলেন্দু গুণের নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব পেয়ে, প্রতীক মেলাতে কুমিরের সন্ধানে নেমে যাওয়া হুমায়ূনের পক্ষেই সম্ভব। শাওনের মতে, 'হিমু'কে হুমায়ূন তুলে এনেছেন তাঁর বাবার আদলে, শুভ্রকে নিজের ছাঁচে। মিসির আলীও কি হুমায়ূনের প্রতিচ্ছবি নন? একা বাস করা, কাজের ছেলের সর্বস্ব নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাথে তো মিল পাওয়াই যায়।
উদারতা ছিল টাকা-পয়সার ব্যাপারেও। দু'হাতে খরচ করেছেন, সিনেমা বানিয়েছেন, ধার দিয়েছেন, ভ্রমণ করেছেন। ফ্ল্যাটে বন্ধু-বান্ধব, আড্ডার আয়োজন লেগেই থাকত। রয়ালিটির পেমেন্ট সবসময় ক্যাশে নিতেন। হুমায়ূন তাঁর উপন্যাসের পান্ডুলিপিগুলো হাতে লিখতেন, কম্পোজের পর মূল পান্ডুলিপি ছিঁড়ে ফেলতেন নিজের হাতে।
আকাশ্চুম্বী খ্যাতিসম্পন্ন এই মানুষের কাছে আসতো নারীভক্তদের চিঠি, ছবি, নানান প্রস্তাব। এমন বিখ্যাত, একই সাথে খেয়ালী, কিন্তু সংসারজীবনে আটপৌরে একজন মানুষের স্ত্রী হিসেবে জীবন কাটানো কতটা সহজ? কতটা কঠিন? একজন যা পারেননি, অন্যজন তা পেরেছেন। বিয়ের পর হুমায়ূন আহমেদ শাওনের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেন, 'কখনো আমাকে বাসা থেকে বেরিয়ে যেতে বলবে না তুমি, না কখনো বাসা ছেড়ে চলে যাবে।' একাকিত্বের প্রতি তাঁর আতংক এই কথাতেই টের পাওয়া যায়।
লেখক হুমায়ূন আহমেদের ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে চিত্রায়ণ করা বেশ কঠিন। গুলতেকিনের ক্ষোভে ভরা বিভিন্ন সাক্ষাৎকার ও 'তালাক' এর মতো কোনো অতিরঞ্জিত বইয়ের বর্ণনা যেমন অসামঞ্জস্যপূর্ণ, তেমনি শাওনের বর্ণনাও যে 'সুগার কোটেড' হবে তাতে সন্দেহ নেই। নোভা-শীলা-বিপাশার তীব্র অভিমানের শেকড় কোথায়? হুমায়ূন যখন শাওনের প্রেমে পড়েন, গুলতেকিনের সঙ্গে তাঁর ইতোমধ্যেই সম্পর্কচ্ছেদ ঘটেছে। দশম শ্রেণির ছাত্রী শাওনের পক্ষেও কি সম্ভব ছিল এমন একজন জাদুকরকে ফিরিয়ে দেওয়া? যদিও শাওনের বয়ানে, তিনি লেখক হুমায়ূনকে না, মানুষ হুমায়ূনের জীবনের প্রদীপটাই ধরেছিলেন।
হয়তো শাওনই পেরেছিলেন তাঁর অন্তরের কষ্টগুলো ভুলিয়ে দিতে। অথবা কেউই হয়তো পারেননি। যে জন্যই হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন
এসেছিলাম,
দেখতে পেলাম
'কোথাও কেউ নেই',
আমার কষ্ট
খুবই পষ্ট
বোঝার মানুষ নেই।
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....