একজন মানুষ, যার ন্যূনতম বোধ আছে, সে একটু চোখ খুললেই বুঝতে পারে, তার চারপাশের এই পৃথিবীটা এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি। আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন, সৃষ্টি করেছেন তার দেহ, তার মন, তার অনুভূতি—সবকিছু। তার চারপাশে যা কিছু আছে, যেখানে সে আছে, তার শরীরে ক্রমপ্রবহমান অক্সিজেন; তার দৃষ্টিশক্তি, যা দিয়ে সে দেখে; তার শ্রবণশক্তি, যা দিয়ে সে শোনে; তার জিহ্বা, যা দিয়ে সে স্বাদ নেয়—এগুলো তাকে আল্লাহ দিয়েছেন। একটা মানুষ যদি খাতা কলম নিয়ে লিস্ট করতে বসে তবে সে আবিষ্কার করবে, তার আশেপাশে সে যা দেখছে, ঘুরেফিরে তার সবই আল্লাহ দিয়েছেন। মানুষ যা কিছু তৈরি করেছে, তার সবই আসলে দিয়েছেন আল্লাহ তা‘আলা। কেননা, মানুষ শূন্য থেকে কিছু তৈরি করতে পারে না। যে বস্তু দিয়ে বা যে জ্ঞানের সমন্বয়ে কিংবা যে তত্ত্বের আলোকে সে কিছু তৈরি করে—সেই বস্তু, সেই জ্ঞান, সেই তত্ত্ব এগুলো আল্লাহই দিয়েছেন। মানুষ হয়তো ভাবতে পারে, সে-ই জাহাজ বা এরোপ্লেন তৈরি করেছে; কিন্তু পানিতে কিংবা বাতাসে একটা বস্তুর যে ভেসে থাকার ক্ষমতা, তা তো দিয়েছেন আল্লাহ। পানির যে গুণের কারণে জাহাজ ভেসে চলে, কিংবা তড়িৎ প্রবাহিত হলে টাংস্টেনের তারের উত্তপ্ত হয়ে আলো বিকিরিত হওয়ার যে গুণ—তা কিন্তু মানুষ সৃষ্টি করেনি, করেছেন আল্লাহ। কাজেই একজন মানুষ যখন চোখ খুলে চারপাশে তাকাবে, সে দেখবে যে, সে এমন একটা জগতে বসবাস করছে, যে জগতটা একান্তই আল্লাহর। একচ্ছত্র আধিপত্য কেবল তাঁর, তিনি একাই সবকিছুর মালিক।
এতটুকু বোঝার পর, একজন ন্যুনতম বোধসম্পন্ন মানুষও বুঝতে পারবে যে, তার নিজের আসলে কোনো ক্ষমতা নেই, সে অন্যের অধীনে বাস করছে। তার নিজের এখানে কোনো কর্তৃত্ব নেই, কারণ তার চারপাশে যা কিছু আছে, সেগুলো কিছুই তার নয়। এটা তার রাজ্য নয় যেখানে সে যা বলবে, তা-ই হবে। কখন সূর্য উঠবে, কখন বৃষ্টি নামবে, কখন সন্ধ্যা হবে—এগুলোর কোনোকিছুর উপরই তার হাত নেই। অর্থাৎ, চলতে-ফিরতে একজন মানুষ এবং তার মতো যারা আছে, তারা সবাই অন্য এক সত্তার মুখাপেক্ষী।
এটাই মানুষের প্রথম পরিচয় বা প্রকৃত অবস্থান। সে আল্লাহ তা‘আলার রাজত্বে, আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছার অধীনে বসবাস করছে। এটাই তার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক, আল্লাহ তার রব, তার প্রভু এবং সে তাঁর দয়ায় বসবাস করছে। আরবিতে তার এই অবস্থানের নাম হচ্ছে, ‘আব্দুল্লাহ’, অর্থাৎ, আল্লাহর দাস। মানুষের অবস্থানটাই এমন। সে দুনিয়াতে এভাবেই এসেছে, এটাই তার বাস্তবতা, সে যতই চেষ্টা করুক না কেন, মুখাপেক্ষিতা ও নির্ভরশীলতার এই গণ্ডি থেকে কখনো বের হয়ে আসতে পারবে না, এভাবেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, সে তৈরিই হয়েছে বান্দা বা দাস হিসেবে।
লেখক : জিম তানভীর (এই আর্টিকেল এর)
বই: চয়ন
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....