এই বিশাল রচনা পড়ে এর সারমর্ম বুঝলাম যে, আজকে আমার ক্লাস সকালের শিফটে। ম্যাসেজ পড়ে ঠান্ডা মাথায় শুয়ে পড়লাম । বালিশে মাথা লাগিয়ে দিতেই যেন মাথায় বাজ পড়ল। কারণ কবির স্যার বলেছেন ক্লাস সকালে। সকালের শিফট শুরু সাড়ে আটটা থেকে। অলরেডি সাড়ে সাতটা বাজে, দৌড় দিতে হবে নাহলে লেট হয়ে যাবে। কোনো রকমে শার্ট পরে দৌড় দিলাম কলেজের উদ্দেশ্যে।
কলেজে গিয়ে সরাসরি চলে গেলাম ক্লাসে। উদ্দেশ্য তাড়াতাড়ি ক্লাস নিয়ে সোজা বাড়ি, তারপর ঘুম। ক্লাসে ডুকতেই এক ছাত্রী কানের পাশে এসে বলে উঠল, "গুড মর্নিং স্যার।" এমনে খুন হয় নি. মাথাব্যাথা। মেয়েটির গুড মর্নিং শুনে গরম হয়ে উঠল। চেঁচিয়ে বলে উঠলাম, "তোমার গুড় মর্নিং তোমার কাছে রাখো। যত্তসব।" আমার কথা শুনে মেয়েটার চোখে পানি চলে আসলো, কখনো কাউকে রেগে কথা পর্যন্ত বলি নি আর আজ বিনা কারণে রকা দিয়ে বসলাম। যথারীতি ক্লাস শুরু করলাম, রোল ডেকে ম্যাথ করানো শুরু করলাম। ম্যাথ করতে গিয়ে গতকাল রাতের কথা মনে পড়ে গেল। আজকের ম্যাথটা গতকালকের মানুষটার মত। অনেক বড়।
যথারীতি ম্যাথ করতে শুরু করলাম যেমনটা করেছিলাম গতকাল রাতে সেই মানুষটার সাথে। প্রথমে মানুষটার আঙুল আর হাতের মতো ম্যাথের অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দিতে হবে। দিলাম। এতে লোকটার সাইজের মতো ছোট হয়ে আসবে। এর ম্যাথের সমীকরণ তৈরি করতে হবে। যেমন করেছিলাম সেই মানুষটাকে। সমীকরণের মূলের মতো হলো মানুষটির মস্তিষ্ক। যেমনিভাবে মানুষটার হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, কলিজা নাড়িভুড়ি বের করেছিলাম সেই ভাবে সমীকরণের ধ্রুব পদগুলো বের নিয়ে আসলাম। যেভাবে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে যেভাবে মূল সংবলিত পদ আলাদা করলাম। তারপর গরম সুই দিয়ে খুঁচিয়ে খুচিয়ে মূল সংবলিত পদ হতে একই পদ বের করে সেই ভাবে তার চোখ বের করেছিলাম। মাথার চারপাশে যেভাবে চুরি দিয়ে কোপাকুপি করেছিলাম একইভাবে সমীকরণের দুইপাশে কোপাকুপি করলাম। এতে একসময় সমীকরণের মূল বেরিয়ে গেল যেমনভাবে বেরিয়েছিল তার মস্তিষ্ক। কারণ মূল হলো এব্রিথিং আর বাকি সব নাথিং। এভাবে ম্যাথ সলভ হয়ে গেলো। সত্যি গতকাল রাতের ম্যাথটা সলভ করতে অনেক মজা পাইসি। এমন সময় শুনতে পেলাম কে যেন স্যার স্যার বলে ডাকছে। আস্তে আস্তে শব্দটা যেন কাছে এলো আর কল্পনা হতে বাস্তবে এলাম। দেখলাম আমার ছাত্রী ডাকছে জিজ্ঞেস করলাম, "কি হয়েছে?"
বলল, স্যার, ক্লাস শেষ।"
ওর কথা শুনে আমিও খুশি। যাক এইবার বাসায় গিয়ে ঘুম দিতে পারব। আমি ও খুশি মনে সবকিছু নিয়ে টিচার্স রুমে চলে আসলাম। সেখানে আসতেই একটা মেয়ে আমার কাছে এলো একটা ম্যাথ নিয়ে। দেখলাম মোটামুটি কঠিন আছে। জিজ্ঞেস করলাম, "কাল করে দিলে হবে?
প্রত্যুত্তরে বলল, "হবে স্যার।"
ম্যাথের কাগজটা নিয়ে রেখে দিলাম। ড্রয়ারে ছুরির পাশে। আর ছুরিটা হাতে নিয়ে হাসতে থাকলাম মুচকি মুচকি। মনে মনে বললাম, "আজ রাতে আবার হবে গণিতের তান্ডব নৃত্য। জানি না এই ম্যাথের জন্য আর কত জনের প্রাণ যাবে।" মেয়েটাও আমার দিকে শয়তানি হাসি হেসে বলল, "আরাফ স্যার, ম্যাথ সলভ করবেন কিন্তু। যত যায় যাক, প্যারা নাই"
গল্পঃ ম্যাথ
মাহবুব হোসেন জ্যৈষ্ঠ
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....