নারীরা কি পুরুষদের থেকে কম বুদ্ধিমান?

নারীরা কি পুরুষদের থেকে কম বুদ্ধিমান?



মুসলিম সমাজে অনেকেই এমন বিশ্বাস পোষণ করেন। তবে এই ধারণাটি মোটাদাগে ভুল। অনেকে এক্ষেত্রে নবীজির একটি হাদিসের কথা উল্লেখ করেন।

وَمَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ

I have seen none lacking in Intelligence and religiosity but (at the same time) robbing the wisdom of the wise, besides you. Sahih al-Bukhari (304 and 1462), Sahih Muslim (79), Jami` at-Tirmidhi (2613), Sunan Ibn Majah (4003 and 3250), Sunan Abu Dawood (4679).

এই হাদিসে মূলত নারীদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিকতার তুলনায় তাদের আবেগের দিকটা বেশী থাকে, এটি বলা হয়েছে। পুরুষের চেয়ে নারীদের বুদ্ধি কম এটি কোনভাবেই এই হাদিস থেকে উদ্ধার করা যাবে না। নারীদের আবেগের দিক বেশী, এখন তাদের বুদ্ধি একেকজনের একেকরকম। কেউ হয়তো সমপর্যায়ের পুরুষদের থেকে বেশী বুদ্ধিমান, কেউ সমসাময়িক, কারো বুদ্ধি হয়তো কম। হাদিসে পুরুষের বুদ্ধির সাথে নারীর বুদ্ধির তুলনা নয়, বরং নারীর বুদ্ধির সাথে আবেগের দিকটাকে তুলনা করা হয়েছে : নারীদের মধ্যে বুদ্ধির চেয়ে আবেগের দিকটা প্রবল থাকে।

ধরা যাক, আপনি বললেন, খালেদ ডানহাতি, তার ডান হাতে শক্তি বেশী ; রাশেদ বামহাতি, তার বাম হাতে শক্তি বেশী। এই দৃষ্টান্তে আমরা প্রত্যেকের ডান হাতের তুলনায় বাম হাত/ বাম হাতের তুলনায় ডান হাতে শক্তি কেমন, সেটি জানলাম। খালেদের ডানহাতে রাশেদের ডান হাত থেকে বেশী শক্তি আছে, এটি উল্লেখিত দৃষ্টান্ত থেকে প্রমাণ করা কঠিন।

এবার আবার হাদিসটা পড়ুন, I have seen none lacking in Intelligence and religiosity but (at the same time) robbing the wisdom of the wise, besides you. নারীরা আবেগের বলে বুদ্ধিমানদের পরাভূত করতে পারে, তাদের এই সক্ষমতা আছে। এখানে পুরুষের চেয়ে তাদের বুদ্ধি কম, এটি মোটেই বলা হয়নি।

আয়েশা (রাঃ) এর কথাই ভাবুন। হাদিসের পাতায় পাতায় তার আবেগের কথা বর্ণিত হয়েছে। নবীজির সাথে তার খুনসুটিতে ওঠে এসেছে আবেগের গল্প। তবে এই আবেগি আয়েশাই কি সাহাবিদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমানদের একজন ছিলেন না? শুধু আয়েশাই নয়—রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু—আপনাদের আশেপাশে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাবেন।

কাজেই, মেয়েদের আবেগ বেশী বলে তাদের বুদ্ধি কম, এটি কখনোই বলা যাবে না। তবে যেহেতু বুদ্ধির তুলনায় আবেগ বেশী, তাই কিছুক্ষেত্রে ইসলাম নারীদের তুলনায় পুরুষকে প্রাধান্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপরিচালনা থেকে শুরু করে সংসার, অনেককিছুতেই এটি স্পষ্ট। তবে এই প্রাধান্যও বিনিময়হীন নয়, যতটুকু প্রাধান্য ততটুকু অতিরিক্ত দায়িত্ব পুরুষকে বহন করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَلَهُنَّ مِثْلُ ٱلَّذِى عَلَيْهِنَّ بِٱلْمَعْرُوفِ ۚ وَلِلرِّجَالِ عَلَيْهِنَّ دَرَجَةٌۭ ۗ وَٱللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

Women have rights similar to those of men equitably, although men have a degree ˹of responsibility˺ above them. And Allah is Almighty, All-Wise. (2:228)

কারো যদি এই কথায় খারাপ লাগে, তবে নীচের আয়াতটিও পড়া যেতে পারে,

وَلَا تَتَمَنَّوْا۟ مَا فَضَّلَ ٱللَّهُ بِهِۦ بَعْضَكُمْ عَلَىٰ بَعْضٍۢ ۚ لِّلرِّجَالِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبُوا۟ ۖ وَلِلنِّسَآءِ نَصِيبٌۭ مِّمَّا ٱكْتَسَبْنَ ۚ وَسْـَٔلُوا۟ ٱللَّهَ مِن فَضْلِهِۦٓ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمًۭا

And do not crave what Allah has given some of you over others. Men will be rewarded according to their deeds and women ˹equally˺ according to theirs. Rather, ask Allah for His bounties. Surely Allah has ˹perfect˺ knowledge of all things. (4:32)


আল্লাহ নারী-পুরুষকে স্বতন্ত্রভাবে সৃষ্টি করেছেন। এটি আমাদের প্রতি রহমত। এই স্বতন্ত্রতার প্রতি যত্নবান হওয়া জরুরী। একে এককথায় জেন্ডার ইন্টালিজেন্স বলে।

লিখেছেন : ইফতেখার জামিল
সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ