মাহফুজ স্যার - তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে - লেখক শরীফ আবু হায়াত অপু

     | মাহফুজ স্যার |


অনেকক্ষণ ফার্মগেটে দাঁড়িয়ে আছি, খুব চেষ্টা করছি বিরক্ত না হওয়ার জন্য কিন্ত পারা যাচ্ছে না। রাস্তার দিকে চেয়ে আছি তো আছিই, মোহাম্মদপুর যাওয়ার কোনো বাসের দেখা নেই। বাসায় বাবা না খেয়ে অপেক্ষা করছেন আমার জন্য, ভাঁড়ারের চাবি আমার কাছে, বাসায় যাব তবেই ভাত রান্না হবে। এদিকে ফোনের পরে ফোন, তাড়াতাড়ি আয়। 

হঠাৎ দেখি এক পাগড়িপরা লম্বা দাড়ির ভদ্রলোক মোটরসাইকেল ধীর করে বাস কন্ডাক্টরদের মতো হাঁকছেন—মোহাম্মদপুর, মোহাম্মদপুর। তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে বললাম, জী আমি যাব। উনি এগিয়ে বসে পেছনে জায়গা করে দিলেন। পরিচয় হলো—উনার নাম মাহফুজ, পেশায় শিক্ষক। পরিচিত হওয়ার পরেই ইতস্তত একটা ভাব চলে এল, এমন একজন মানুষকে টাকাটা দিই কীভাবে... শেষে দ্বিধা ঝেড়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, আচ্ছা স্যার, আপনি এভাবে আমাকে ডেকে নিলেন কেন? উনি যা বললেন তার সারমর্ম:

আল্লাহ বলেছেন, তোমরা জমিনবাসীদের উপর দয়া করো তাহলে আমি (আল্লাহ) তোমাদের উপর দয়া করব। অনেক সামর্থ্যতো নেই যে আমি মানুষের অনেক সেবা করব, তবে যতটুকু সম্ভব তাই করার চেষ্টা করি। যেমন: আমি ফাঁকা মোটরসাইকেলে করে বাসায় যাচ্ছি, এখন একটা মানুষ যদি আমার সাথে যায় তবে আমার তো ক্ষতি হবে না কিন্তু যে যাবে তার তো একটা উপকার হবে। এখন এই যে আপনাকে আমি নিয়ে এলাম এতে কিন্ত আপনার চেয়ে আমার নিজের বেশি লাভ হয়েছে। আপনি তো নিজে চলে আসতে পারতেন—বাসে বা অন্যভাবে। কিন্তু আমার পেছনে আনার মাধ্যমে আল্লাহ আমাকে সম্মানিত করলেন, আমাকে কিছু নেকি অর্জনে র সুযোগ দিলেন। এটা আমার প্রতি আল্লাহর মেহেরবানি। এভাবেই ছোট ছোট সেবা করার মাধ্যমে যদি আল্লাহ বড় কিছু করিয়ে নেন—এই আশায় আছি। ইখলাসসহ যদি শুধু আল্লাহকে খুশি করার জন্য কোনো ভালো করে থাকি তবে আল্লাহ আমার ভালো করবেন—এই দুনিয়ায়, পরকালেও। চেষ্টা করি নিজের জীবনে ইসলাম পালন করার। অনেকে আছে যারা মুখে বললে শোনে না কিন্তু আমার কথা, কাজ, জীবনযাপন থেকে দেখে শেখে ইসলাম কীভাবে মানা উচিত।

নিজের মনেই অনেক ছোট হয়ে গেছি আমি ততক্ষণে, জানলাম এ রকম কিছু মানুষ এখনো বেঁচে আছে বলেই ঢাকা এখনো হাইতি হয়ে যায়নি।

বই : তত্ত্ব ছেড়ে জীবনে
লেখক : শরীফ আবু হায়াত অপু
অর্ডার লিংক Click Here 

সিয়ান | বিশুদ্ধ জ্ঞান | বিশ্বমান

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ