ত্রিসংকটে অর্ক (অর্ক সমগ্র ২) - লেখক পল্লব হালদার | Trisongkote Orko


“জীবনে মাঝেমাঝে অন্ধকারের ভীষণ প্রয়োজন তুহিন, নাহলে নতুন আলোর উৎস খুঁজে পাওয়া যায় না। আপাতদৃষ্টিতে যাকে অন্ধকার বলে মনে হয়, সেই অন্ধকারই দেয় এই নতুন আলোর খোঁজ। আমরা সবসময়েই নিঃশ্বাস নিচ্ছি, কিন্তু অক্সিজেনের মাহাত্ম্য তখনই বুঝতে পারি, যখন আমরা জলের মধ্যে ডুবে যাই। একটুখানি অক্সিজেনের জন্যে তখন আমরা হাঁকপাঁক করি। তাই জীবনে অন্ধকার প্রয়োজন, না হলে আলোর প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝতে পারতাম না।”

📌বই :- ত্রিসংকটে অর্ক (অর্ক সমগ্র ২)
📌লেখক:- পল্লব হালদার
📌মুদ্রিত মূল :- ২৮৯
📌প্রকাশনী :- ধী 

সদ্য পড়ে শেষ করলাম আমার অত্যান্ত প্রিয় একজন লেখক পল্লব হালদার  মহাশয়ের লেখা অর্ক সিরিজের দ্বিতীয় বই "ত্রিসংকটে অর্ক, অর্ক সমগ্র ২"

"ভয় " নামের একটা ছোট গল্প দিয়ে অর্কের যাত্রা শুরু হয়েছিল, আর সেই প্রথম প্রকাশেই ড. অর্ক সেন মন জয় করে নিয়েছিল পাঠকদের। " অর্ক সমগ্র ১" পড়ার পরে চাতক পাখির মতো চেয়ে ছিলাম কবে আবার অর্কের নতুন বই আসবে। অবশেষে লেখক মহাশয় নিয়ে এলেন অর্কের নতুন একটি বৃহৎ রহস্য উপন্যাস।

 দীর্ঘ অপেক্ষার পরে হাতে এলো যেদিন,,, অপেক্ষা করতে আর মন চায়নি। হলোও তাই, আর যখন শুরু করলাম আর উঠতে পারিনি। এক সিটিং এ শেষ এই টান টান উপন্যাসটি। ভীষণ ভীষণ ভালো লেগেছে।

কাহিনীর প্রধান চরিত্রে আছে ড. অর্ক সেন। লেগোসের একটি নামকরা হসপিটালের কনসালট্যান্ট সাইক্রিয়াটিস্ট। নিজে রহস্যের সাথে লড়াই করে সমাধান করার চেষ্টা করলেও যার নিজের জীবনই ভীষণ রহস্যময়। অর্কের বেশির ভাগ কেসের সাথেই থাকে তুহিন, যার কলম থেকেই আমরা অর্কর কেস গুলো সম্পর্কে জানতে পারি।

আগের বইটি ছিলো ছোট - বড়ো গল্প সংকলন। আর এটি একটি বৃহৎ উপন্যাস। আরও একটা আলাদা দিক হলো আগের গল্পগুলো মূলত তুহিন আমাদের কে নিজের মুখ দিয়ে শুনিয়েছেন তাই গল্পগুলো ও উত্তম পুরুষে লেখা হয়েছিল । কিন্তু এবারে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অর্কের সাথে থাকতে পারেনি তুহিন, তাই বেশির ভাগই অর্কের থেকে শুনে লেখা হয়েছে। গল্প বলার স্টাইল ও তাই বদলে হয়ে গেছে প্রথম পুরুষ।

 তবে এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন আগের খন্ডের সাথে এই খন্ডের কোনো যোগাযোগ নেই। আপনি চাইলে এই বইটি দিয়েও শুরু করতে পারেন।

বইয়ের নামকরণ কেনো ত্রিসংকটে হলো সেটা বইটি পড়ার সময়েই ভালো ভাবে বোঝা যাবে। আগে অর্ক কে দেখা গেছে মূলত একটি কেস নিয়েই সমাধান করতে। কিন্তু এবারে আমরা অর্ক কে একসাথে তিনটি কেস নিয়ে সমাধান করতে দেখব। তবে কেস তিনটি হলেও কোথাও গিয়ে এই তিন দিকই জুড়ে গিয়েছে এক সুতোতে।

কাহিনীর স্পয়লার দিচ্ছি না। যে তিনটি কেস নিয়ে অর্ক লড়াই করবে সেটা বলছি।

📌প্রথম কেসটি সাইকোলজিক্যাল + অতিপ্রাকৃত মিশ্রনে তৈরি। চিত্তরুপা নামের একটি মেয়ে যে লেগোসে থাকে। সে নাকি ভবিষ্যত দেখতে পায়।।

📌দ্বিতীয় কেসটি একটি সম্পূর্ণ সাইকোলজিক্যাল । চিত্তরুপার এক স্কুলের এক স্কুল টিচারের স্বামীর একটি এক্সিডেন্ট হবার পরে বিগত প্রায় ৮ বছরের স্মৃতি লোপ পেয়েছে।

📌তৃতীয় কেসটি আরও জটিল, আপাত দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভৌতিক। হায়দ্রাবাদের সালার জাং মিউজিয়ামের মূর্তিগুলো নাকি রাতের বেলা জীবন্ত হয়ে উঠছে।

মোটামুটি এই তিনটি কেস। যেগুলোর ছড়িয়ে আছে লেগোস থেকে ভারতবর্ষের হায়দ্রাবাদ পর্যন্ত। পাতায় পাতায় লুকিয়ে আছে উত্তেজনা আর টান টান থ্রিলিং আবহাওয়া।

অর্ককে লেখক একজন সুপার হিউম্যান আকারে তৈরি করেননি, তাই আগের বইতেও অর্ক ও তুহিন জুটি কে ভয়ঙ্কর রকমের বিপদে পড়তে দেখেছি কখন ও তো প্রাণ নিয়ে টানাটানি,,, এখানেও অর্ক একজন সাধারণ মানুষ হিসাবেই এসেছে। বিপদেও পড়তে হয়েছে। কি সেই বিপদ তা জানার জন্য তো বইটি পড়তে হবে।

তিনটি কেস ই ভীষণ জটিল,,, তবে তাঁদের সমাধান করার পদ্ধতি ভীষণ ভালো লেগেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে লোপ পাওয়া স্মৃতি ফিরে আসবে কিভাবে সেটার সমাধান। ঐ অংশ টা পড়ার সময়ে পাঠক ইমোশনাল হতে বাধ্য।।

হায়দ্রাবাদের অপূর্বসৌন্দর্যের বর্ণনা পাওয়া যায় এখানে। সাথে হায়দ্রাবাদের ইতিহাস। সালার জাং মিউজিয়ামের ইতিহাস। মিউজিয়ামের আশ্চর্য কিছু জিনিসের বর্ণনা। কখনও যেতে পারলে অবশ্যই সেগুলো দেখব তবে তার আগে লেখক নিজের লেখার মাধ্যমেই সেগুলো মনের ভিতরে দেখিয়ে দিলেন।

একটা বিশেষ দিক যেটা আগেও অনুভব করেছি এই বইতে আরও বেশি অনুভব করেছি তা হলো মিসির আলিকে । দুজনের চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন তবুও সেই অনুভুতি গুলো অনুভব করেছি। কেস সমাধান করার কিছু কিছু পদ্ধতি...সেই রহস্যময়তা যা গোটা কাহিনী জুড়ে ছেয়ে থাকে এমনকি শেষে গিয়েও রহস্য।।

এই বইটি বা আগের বইটিও এখনও পর্যন্ত আমার পড়া সমস্ত বইয়ের থেকে একদম ব্যতিক্রম। প্রচুর ছবি আছে 😍😍... একটা উপন্যাস হোক বা গল্প খুব জোর ২-৩ টে ছবি দেখেছি থাকতে, যদি সেটা উপন্যাসও হয়।
এখানে উপন্যাসের ভিতরে ১৬ টা দুর্দান্ত কিছু ছবি আছে... প্রায় প্রত্যেকটা চরিত্রকেই ছবি দিয়ে চিনিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর প্রচ্ছদটি অসাধারণ। চিত্রশিল্পীর হাতের কাজ খুবই সুন্দর। ভালো করে লক্ষ্য করলে কভার এর সাথে কোথায় উপন্যাসের যোগ আছে ধরতে পারবেন। ব্যতিক্রমের আরও একটা কারণ এটাও আগের বইতে পেয়েছি, একটিও বানান ভুল চোখে পড়েনি। ধী প্রকশনীর বইয়ের প্রত্যেকটা কাজ খুবই ভালো। বইগুলো তারা অনেক যত্ন নিয়ে করে প্রকাশ করে ❤

শেষে একটি কথা অবশ্যই বলব, থ্রিলার ভালো বাসলে, অলৌকিক কিছু ভালো বাসলে অথবা সাইকোলজিক্যাল গল্পের পোকা হলে শুধু এই বই নয়, গোটা সিরিজটি বিরিয়ানির চেয়েও সুস্বাদু কিছু থেকে থাকলে তার সমতুল্য হবে আপনার কাছে !!

📌ব্যক্তিগত ভাবে বইটির রেটিং আমি ৯.৫/১০ দেব।

ভালো থাকবেন লেখক মহাশয়। আপনার লেখনী এভাবেই আরও অনেক অনেক দূর এগিয়ে চলুক 😍😍আমাদের কেও আর নানান স্বাদের কাহিনী উপহার দিতে থাকুন ❤️

অনেক কথা বলে ফেললাম। লেখকের কাছে শেষ একটি প্রশ্ন, যদিও বইটি এই সবে মাত্র প্রকাশ পেল🙂 তবুও...  "অর্ক সমগ্র ৩ কবে আসছে?"🙂

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ