ভ্রূণের আর্তনাদ - শাহীনা বেগম | Vruner Artonad - Shahina Begom

  • বই : ভ্রুণের আর্তনাদ
  • লেখিকা : শাহীনা বেগম 
  • সম্পাদনা : মুফতি তারেকুজ্জামান, ডা. শামসুল আরেফীন শক্তি, মুফতি আবুল হাসানাত কাসিম, আফিফা আবেদীন সাওদা।
নবী মুহাম্মাদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন কন্যার বাবা-মা সম্পর্কে বলেছেন —

" কারো যদি তিনটি বা দুটি কন্যাসন্তান থাকে আর সে যদি তাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে,তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করে এবং আদর-যত্নের সাথে বড় করে তোলে,তবে আল্লাহ সেই বাবা-মায়ের জন্য জান্নাতের ব্যবস্থা করে দিবেন" [সুনানে আবু দাউদ-৫১৪৭]

বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমানিত, কারো ছেলে হবে না মেয়ে হবে তা পুরোপুরি নির্ভর করে পিতার শুক্রানুর উপর, মায়ের ডিম্বানুর উপর নয়।



'দারিদ্রের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা করো না, আমিই তাদেরকে রিযিক দেই আর তোমাদেরকেও। নিশ্চয়ই তাদেরকে হত্যা করা মহাপাপ।[ইসরা-৩১]

বইটিতে একটি নিস্পাপ ভ্রুনের নিদারুন আর্তনাদ নিয়ে, নারী-পুরুষের সচেতনতার গল্প ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ বই পড়ে একজন পুরুষ কন্যাসন্তানের মূল্য উপলব্ধি করতে পারবে, সেই সাথে একজন নারী ও বুঝতে পারবে (Menstrual regulation) নিছক কোনো ছেলেমানুষি নয় মহাপাপ।

'ভ্রূণের আর্তনাদ' বইয়ের প্রচ্ছদ। 
.
'ভ্রুণের আর্তনাদ' বই থেকে একটুখানি...

আলট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে বলা হলো—বোঝা যাচ্ছে না, আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। শুনেই মায়ের বুক কেঁপে ওঠে। বোঝা যাচ্ছে না মানেই তো ‘মেয়ে’। ওরা কি কিছু লুকোচ্ছে আমার কাছ থেকে? রিপোর্ট হাতে নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে করতে ছুটলেন ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার বললেন, ‘যদি কিছু করতেই হয়, তবে তা এখনই। এখন তো সামান্য একটু রক্তপিন্ড ছাড়া আর কিছু নয়, কোনো রিস্কও থাকবে না। ভয় পাবেন না, সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।” কিছু ওষুধ লিখে দিলেন খাওয়ার জন্য আর বললেন, “সাত দিনের মাঝেই ঠিক হয়ে যাবে আশা করি, যদি না হয় কিছু টেস্ট লিখে দিলাম, রিপোর্টগুলো নিয়ে এ্যাপয়েন্টমেন্ট করে এক সকালে চলে আসবেন।” মা বুকের ভেতরের প্রচণ্ড কাঁপন সংযত করে ভীত কণ্ঠে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ছেলে নাকি মেয়ে তা নিশ্চিত হতে আর কত সময় লাগবে?’ ‘আরো মাস দেড়েক। ততদিনে বড় হয়ে যাবে, আমরা তখন কিছুই করতে পারব না’, ডাক্তার জানালেন। 
.
ওষুধ কিনে বাড়ি ফিরলেন মা। বাবার চোখের আড়ালে লুকিয়ে ফেললেন সেগুলো। রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়লে মা ফ্রিজের ঠান্ডা এক গ্লাস পানি আর ওই ওষুধগুলো নিয়ে বসলেন। ওগুলো নাড়াচাড়া করছেন আর ভাবছেন, ‘কী করা যায়? যদি ছেলে হয়! ছেলেটিকে মেরে ফেলব?’ ভাবেন আর ভাবেন, ‘রাখব, না ফেলব?’ স্থির করতে পারছেন না কী করবেন। গ্লাসের পানিটুকু এক নিঃশ্বাসে শেষ করে উঠে পড়লেন মা আমার।  



এভাবেই ক’টা দিন পার হয়ে গেল। প্রতিরাতেই ওষুধগুলো নিয়ে মা নাড়াচাড়া করেন। আর চিন্তা করেন, ‘এখনই খেয়ে নেব নাকি! মা যখনই ওষুধগুলো হাতে নেন, আমি ডুকরে কেঁদে উঠি, “মা খেয়ো না, খেয়ো না, আমাকে বাঁচতে দাও। আমি শুধু একটু রক্তপিন্ড নই, ডাক্তার তোমাকে ভুল বলেছে। আর ডাক্তার যাই বলুক মা, তুমি তো বুঝতে পারছ আমি নিরেট একটা জড় পদার্থ নই; আমার মাঝে প্রাণ আছে। আমি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছি, বেড়ে উঠছি। আমাকে বাঁচতে দাও।”

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ