বইটি যারা পড়েন নি তাদের রিভিউটি না পড়ার অনুরোধ।
- বইঃ মায়ামৃগ
- লেখিকাঃ ইলমা বেহরোজ
- জনরাঃ এডভেঞ্চার থ্রিলার
- প্রকাশনীঃ অন্যধারা
- পৃষ্ঠাঃ ৩০৩ টি
- মূল্যঃ ৪৯৫ টাকা (২৫% ছাড়ে)
চরিত্রঃ ফ্লোরা, টোটো, সোলেমান, গফুর, জুহাদ, শিরিন, বাহার, তালিবুল, অলিসহ উপন্যাসটিতে রয়েছে আরো অনেক চরিত্র। উপন্যাসটির যত সামনে যাওয়া যাবে, ততই নতুন নতুন চরিত্রের সাক্ষাৎ পাবো আমরা। এদের আলাদাভাবে পরিচয় করিয়ে দিবো না। উপন্যাসটি পড়লেই এদের যোগসূত্র জানতে পারা যাবে।
কাহিনিসংক্ষেপঃ উপন্যাসটি মূলত হীরাকান্ত দ্বীপকে কেন্দ্র করে। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত একটি মেয়ে ফ্লোরা। যার বুকে জমে আছে পৃথিবীর প্রতি এক আকাশসম অভিমান। কিন্তু কেন? কি সেই কারণ যার জন্য এই ছোট্ট মেয়েটির নিজের প্রতিও বিতৃষ্ণার সৃষ্টি হয়েছিল? নিজের ক্ষ তি করতে পারলেই যেন মেয়েটি বেঁচে যায়! কিন্তু ঘটনাচক্রে দেখা হয়ে গেলো পলাতক একটি চক্রের সাথে। নিজেদের বাঁচাতে তাঁরাও হীরাকান্তকেই বেঁছে নিয়েছে। ধীরে ধীরে দলটির সাথে সখ্যতা গড়ে উঠতে লাগলো ফ্লোরার। তাদের দিকে অত্যধিক ঝুঁকতে লাগলো ফ্লোরা। যার ফলে প্রাণে বেঁচে থাকলেও একের পর এক সত্যের মুখোমুখি হচ্ছিল। ভেঙে যাচ্ছিল তার কোমল মনের স্বপ্ন। কিন্তু এতকিছুর পরও একটি প্রশ্ন থেকেই যায়! দলটি পলাতক কেন? তাঁরা কি এমন অপরাধ করেছে যে পুরো দেশের লোকজন, মিডিয়া, পুলিশ হন্যে হয়ে তাদের খুঁজছে? কি হয় শেষ অবধি তাদের পরিণতি? যে বেঁচে থাকার জন্য তাদের যুদ্ধ, শেষ পর্যন্ত তারা কি সে প্রাণকে রক্ষা করতে পারে?
পাঠপ্রতিক্রিয়াঃ লেখিকার প্রথম বই হিসেবে তিনি বেশ ভালো লিখেছেন। যেভাবে দ্বীপটির বর্ণনার দিয়েছেন, একেকটা মুহূর্তকে ফুটিয়ে তুলেছেন অসাধারণ বলতেই হয়। এছাড়াও কয়েকটি সায়েন্টিফিক বিষয়াদি লিখেছেন। বইটি পড়লেই বুঝা যায় লেখিকা উপন্যাসটির জন্য যথেষ্ট স্টাডি করেছেন। তবে আমি এমনটা বলতে পারিনা যে আমার একদম ফার্স্ট ক্লাস লেগেছে উপন্যাসটি। আমার কাছে মোটামুটি ধাচের লেগেছে। তাঁর কারণও উল্লেখ করবো আমি। আমি আশা করবো লেখিকা সামনে আমাদেরকে আরো ভালো ভালো বই উপহার দিবেন। উনার জন্য শুভকামনা রইলো।
সীমাবদ্ধতাঃ এভাবে নতুন একটি বইকে নিয়ে সমালোচনা করাটা ঠিক কিনা আমি জানি না। তবে এ কয়েকদিন বিষয়টা আমার মনে খচখচ করছে, তাই না লিখে পারলাম না। বইটির কিছু কিছু জায়গায় আমি একদমই সন্তুষ্ট হতে পারিনি।
১. হীরাকান্ত দ্বীপটিকে বেশ ভয়ং কর ভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন জীবজন্তু, পোকামাকড়ের কথাও উল্লেখ আছে। তবে উপন্যাসটিতে জঙ্গলের হিংসা ত্মক ভাবটি লেখিকা ঠিক ফুটিয়ে তুলতে পারেননি বলে আমার মনে হলো। হ্যাঁ আমি মানছি তারা ঘন জঙ্গলে না গিয়ে নিরাপদ কোনো গুহায় অবস্থান করছিল। কিন্তু তাঁরা তাদের প্রয়োজনে এদিক ওদিক যেতো, সমুদ্রে নামতো মাছ ধরতে, জঙ্গলে যেতো পশু-পাখি শিকার করতে, আহতদের জন্য ঔষধী গাছ আনতেও যেতো। কিন্তু উনারা তখন কোনোরকম আ ক্র ম নের শিকার হননি। হ্যাঁ, পরে উনাদের উপর আ ক্র ম ন হয়েছিল। দুইবার কি তিনবার হবে! একটা ঘন জঙ্গলে উনারা রাতের অন্ধকারে জ্বলজ্বলে চোখ ঠিকই দেখতো, কিন্তু পশুরা কোনো এক অদৃশ্য কারণে চলে যেতো। তবে এর সাথে গল্পের এন্ডিং এর কোনো সম্পর্ক নেই। গল্পের এন্ডিংটা একদমই অন্যরকম হয়েছে। 'শেষ হয়েও হইলো না শেষ' এরকম একটা ভাইব রয়ে গেছিল।
২. কিছু কিছু বিষয় লেখিকা একদমই অমীমাংসিত রেখেছেন। আশা করবো আপনারা বইটি পড়ে আপনাদের কেমন লেগেছে জানাবেন।
প্রিয় লাইনঃ
১. ফ্ল্যাপের অংশ:-
আঁধারী সমীর আমারে নতমুখে শুধায়,
"প্রিয়তমকে এক শব্দে ব্যাখ্যা করার কী উপায়?'
স্মিত হেসে বলি,"মায়ামৃগ চেনো?'
ছুঁয়ে দেখার আগেই সে হারিয়ে যায় যেনো!
২. মানুষ যতই শক্তিশালী হোক, যতই ক্ষমতাধর হোক একজন 'আমার' বলার মতো মানুষ ছাড়া সে শূন্য।
৩. বিচ্ছেদের সুরে মায়া থাকে না,তাল থাকে না; থাকে শুধু যন্ত্রণা৷ যা বক্ষস্থলে রক্তক্ষরণের উৎপত্তি ঘটায়৷ সেই রক্তক্ষরণ মেনে নিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি পথে নীরবে ছুটে চলতে হয় বাকি জীবন৷
৪. মৃত্যু ছাড়া জীবনের গল্প শেষ হয় না। যতক্ষণ শ্বাস-প্রশ্বাস থাকে এক গল্প থেকে অন্য গল্পে জীবন গড়াতে থাকে। জীবদ্দশার রীতি অনুযায়ী প্রতিটি চরিত্র পদার্পণ করে নতুন অন্য আরেকটি গল্পে।
৫. কেউ দূরে চলে গেলেও ততটা কষ্ট হয় না যতটা কষ্ট হয় কাছে থেকেও যখন কেউ কাছে থাকে না।
৬. জীবন থেমে নেই, শুধু মাঝেমাঝে মন থেমে যায়।
৭. বয়স আর অতীত তখনই সম্পর্কের সূত্রপাতে বাঁধা হতে পারে যখন অংশগ্রহণকারীদের অনুভূতি ঠুনকো হয়। আমার অনুভূতি পর্বতের মতো।
ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৬/১০
[আমি আমার মতামত দিয়েছি। কেউ প্লিজ কিছু বলতে আসবেন না। আপনারাও আপনাদের মতামত দিয়ে যান।]
0 মন্তব্যসমূহ
ℹ️ Your Opinion is very important to us, Please Writer your comment below about this Post.....